Paranormal Society BD-জ্বীনদের দেখতে না পাওয়ার কারন

এখানে বলে রাখা ভাল অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, X-Ray, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা।
জ্বীন ফেরেশতা হয়ত এমন কোন সূক্ষাতি সুক্ষ তরঙ্গ যাদেরকে কোন যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না।
জ্বীন শব্দের মোটামুটি অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত।
শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত।
হাদীস তত্তবীদদের মতে জ্বীনদের কয়েক টি শ্রেণী আছে।
যেমন সাধারন জ্বীন, আমির জ্বীন, ইফরীত্ব জ্বীন...
অার ইফরীত্ব জ্বীন শয়তানের চাইতেও বিপদজনক।
জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ২০০০ বছর পূর্বে।
জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরী করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা সবাই কে দেখব কিন্তু আমাদের কে কেউ দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তায়ালা জ্বীন দের এই দুইটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জ্বিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়।
হযরত উমাইয়া বিন মুখ্সী (রা:) বলেছেনঃ
একবার রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর উপস্থিতিতে একব্যক্তি খানা খাচ্ছিল।
হুযুর (সঃ) প্রত্যক্ষ করলেন খাওয়ার শুরুতে সে বিসমিল্লাহ্ বলে নি। তো শেষ পর্যন্ত সে সবই খেয়ে ফেলল,কেবলমাত্র একটি লোকমা বাকি ছিল।
সেই শেষ লোকমাটি মুখে তোলার আগে সে বলল: "বিসমিল্লাহি্ আউওয়ালাহু অ আখিরহু"--অর্থঃ ('খাবারের শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর নাম নেওয়া হল'।)
তখন নবীজি (সঃ) হেসে ফেললেন এবং বললেন:
শয়তান ওর সাথে খাবারে শরীক ছিল,কিন্তু যখনই ও আল্লাহর নাম নিয়েছে অমনই শয়তান যা কিছু তার পেটে গিয়েছিল সব বমি করে দিয়েছে।।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সামনে একবার এক ব্যাক্তিকে পেশ করা হয়,যার প্রতি যাদুর অভিযোগ ছিল।
হাজ্জাজ তাকে প্রশ্ন করেন- "তুমি কি যাদুকর?"
সে বলে - "না"।
হাজ্জাজ তখন একমুঠো কাঁকর নিয়ে সেগুলো গণনা করেন।
তারপর প্রশ্ন করেন-"আমার হাতে কতসংখ্যক কাঁকর আছে?"
লোকটি বলে -"এত সংখ্যক"
হাজ্জাজ তখন সেগুলো ফেলে দেন।তারপর ফের একমুঠো কাঁকর নেন তারপর সেগুলো না গুনেই জিজ্ঞেস করলেন-"এখন আমার হাতে কয়টা কাঁকর আছে?"
সে বলে- "আমি জানি না"
হাজ্জাজের প্রশ্ন- 'প্রথমবারে তুমি ঠিকঠাক বলে দিলে কিন্তু দ্বিতীয়বার পারলে না কেন?'
লোকটির উত্তর- 'প্রথমবার আপনি জেনে ছিলেন এর দ্বারা আপনার অসওয়াসাও জেনেছে। তারপর আপনার অসওয়াসা আমার অসওয়াসাকে জানিয়ে দিয়েছে কিন্তু এবারে আপনি জানেননি তাই আপনার অসওয়াসাও জানতে পারে নি।
ফলে আপনার অসওয়াসা আমার অসওয়াসাকে বলে নি।যার কারনে আমিও জানতে পারি নি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ-
আমি ও জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা শরীফের একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় (দেখলাম) একটি লোকের মৃগী হল। আমি তার কাছে গিয়ে তার কানে (কোরআনের আয়াত) তেলওয়াত করলাম ফলে সে সুস্থ হলো।
জনাব রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন - তুমি ওর কানে কী পড়লে? আমি বললাম- "আফা হাসিবতুম আন্নামা খালাকনাকুম আবাসাউ্ অ আন্নাকুম ইলাইনা লা তুরজাউন" (সূরাহ মুমিনূন,আয়াত- ১১৫) থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তেলওয়াত করেছি। নবীজী বললেন-
যার হাতে আমার জীবন তার কসম! কোনও মুমিন মানুষ যদি এই আয়াতটুকু কোনও পাহাড়ের উপরেও পড়ে, তবে সে পাহাড়ও হটে যাবে।।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) বলেছেনঃ
এক রাতে আমি হেরেম শরীফে প্রবেশ করি। সেই সময় কয়েকজন মহিলাকে তাওয়াফ করতে দেখে অবাক হয়ে যাই। তাওয়াফ করার পর 'বাবুল হুজাবাইন' দিয়ে বের হয়ে যায় । আমি মনে মনে বললাম যে,আমি ওদের পিছনে পিছনে যাবো এবং ওদের বাড়ি কোথায় দেখবো।সুতরাং ওরা যেতে লাগলো আর আমিও ওদের অনুসরন করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত ওরা এক পাহাড়ের উপত্যকায় পৌঁছল।
তারপর সেই পাহাড়ের উপর উঠলো। তারপর ওরা পাহাড় থেকে নেমে এক বিরান জায়গায় গিয়ে পৌঁছল।
আমিও পিছনে পিছনে গেলাম, সেখানে দেখলাম কয়েকজন মুরুব্বি গোছের মানুষ বসে আছে। তারা আমাকে বলল 'হে ইবনু যুবাইর!, আপনি এখানে কীভাবে এলেন?'
আমি বললাম 'আপনারা কারা ?'। তারা বলল 'আমরা জীন'।
আমি বললাম 'আমি এমন কয়েকজন মহিলাকে কাবাঘরের তাওয়াফ করতে দেখলাম,যাদেরকে অন্য প্রজাতির সৃষ্টি বলে মনে হল। তাই আমি ওদের পিছু নিলাম এবং ওদের পিছনে পিছনে এখানে এসে পৌঁছে গেলাম।'
তারা বলল 'ওরা ছিল আমাদেরই মহিলা'।
আচ্ছা, হে ইবনু যুবাইর! আপনি কি খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? বললাম ;আমার মন চাইছে টাটকা খেজুর খেতে।' সেই সময় মক্কা শরীফের কোথাও কোন টাটকা খেজুরের চিহ্ন পর্যন্ত ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা আমার কাছে টাটকা খেজুর নিয়ে এলো। আমার খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর তারা বলল, 'যেগুলো অবশিষ্ট থেকে গেছে ওগুলো আপনি নিয়ে যান।
হযরত ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেছেনঃ এরপর আমি সেখান থেকে উঠি এবং বাড়ির পথে পা বাড়াই। আমার উদ্দেশ্য ছিল খেজুরগুলো মক্কার লোকদের দেখানো।
বাড়ি ফিরে খেজুরগুলো একটা টুকরিতে রাখলাম। টুকরিটা একটা সিন্দুকে রেখে শুয়ে পড়ি। আল্লাহর কছম!! আমি তখন আধঘুম- আধাজাগা, এরকম তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ঘরের মধ্যে হুটপাটার আওয়াজ শুনলাম এবং শুনলাম এইসব কথাবার্তা-
- হ্যাঁ হ্যাঁ রেখেছে।
- সিন্দুকে।
- সিন্দুক খোল।
- সিন্দুক তো খুললাম কিন্তু খেজুর কই?
- টুকরির মধ্যে।
- টুকরি খোল।
- টুকরি খোলতে পারব না। কারন ইবনু যুবাইর 'বিসমিল্লাহ' বলে টুকরি বন্ধ করেছিলেন।
- তাহলে টুকরি সমেত সঙ্গে নিয়ে চলো।
সুতরাং তারা টুকরি নিয়ে চলে গেলো।
হযরত ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলছেনঃ ওরা যখন আমার ঘরের মধ্যেই ছিল, তখন কেন যে ওদের ধরি নি, সে কথা ভাবলে আমার এখন প্রচণ্ড আফসোস হয়।
ইমাম আ'মাশ (রহঃ) বলেছেনঃ-
আমি এক জীনের বিয়েতে 'কুই' নামক এক স্থানে উপস্থিত ছিলাম। বিয়েটি ছিল জীনের সাথে এক মানুষের।
জীনদের জিজ্ঞাসা করা হল কোন খাদ্য তাদের বেশি পছন্দনীয়, ওরা বলল 'ভাত'
তো লোকেরা জীনদের কাছে তাদের খাঞ্জা আনতে থাকছিল আর ভাত শেষ হতে থাকছিল কিন্তু খানেওলাদের হাত দেখা যাচ্ছিল না।
বর্ণনায় হযরত আলিদ বিন মুসলিম (রহঃ) -
একবার একটি লোক একটি গাছে কিছু আওয়াজ শুনলেন এবং (কৌতূহলবশত আওয়াজকারী জীনের সাথে ) কথা বলতে চাইলেন।কিন্তু সে কোন সাড়া দিল না। লোকটি তখন আয়াতুল কুরছি পড়লেন।
ফলে তার কাছে একটা জিন নেমে এলো। লোকটি তাকে জিজ্ঞাসা করলো,"আমাদের মধ্যে একজন ( সম্ভবত জীনঘটিত কারনে )অসুস্থ হয়ে আছে, আমরা কিসের দ্বারা তার চিকিৎসা করবো?" জিনটি বলল, "যার দ্বারা আপনি আমাকে গাছ থেকে নামালেন"
বর্ণনায় হযরত ইবনে আকিল (রহঃ) - আমাদের একটি বাড়ি ছিল।তাতে যখনি কোন লোক থাকতো ,সকালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যেত। একবার মরক্কোর এক লোক এল।ঘরটি সে পছন্দ করে ভাড়ায় নিল।
তারপর রাত কাটালো । সকালে দেখা গেল,সে পুরোপুরি বহাল তবিয়তেই রয়েছে । তার কিছুই হয় নি । তা দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হল । লোকটি বেশ কিছুকাল অই ঘরেই থাকল ।তারপর অন্য কোথাও চলে গেল ।
ওকে ওই ঘরে নিরাপদে থাকার কারন জিজ্ঞাসা করলে ও বলেছিল...আমি যখন ওই ঘরে (প্রথম দিন) রাতে থাকি,তখন এশার নামায পড়েছি ,কোরআন পাক থেকে কিছু পরেছি।এমন সময়...
হঠাৎ দেখি,এক যুবক কুয়ো থেকে উপরে উঠছে । সে আমাকে সালাম দিল । আমি তাকে দেখে ভয় পেলাম । সে বলল,ভয় পেয় না । আমাকেও কিছু কোরআনপাক শেখাও । অতএব আমি তাকে কোরআন শেখাতে শুরু করি।
পরে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি ,এই ঘরের রহস্যটা কি?সে বলে আমরা মুসলমান জীন,আমরা কোরআন পাঠও করি, নামায ও পড়ি । কিন্তু এই ঘরে বেশিরভাগ সময় বদমাশ লোকেরা থাকে, যারা মদপানের মজলিশ বসায়। তাই আমরা ওদের গলা টিপে দেই । আমি বললাম , রাতের বেলায় আমি তোমাকে ভয় পাই । তুমি দিনের বেলায় আসবে । সে বলল, খুব ভালো। তারপর থেকে সে দিনের বেলা কুয়ো থেকে বের হত ।
একবার সে কুরআনপাক পড়ছিল। এমন সময় বাহিরে এক ওঝা এলো, সে আওয়াজ দিয়ে বলল ,আমি সাপে কাটা ,বদ নজর লাগা ও জিনে ধরার ফুক দেই গো!! -এ কথা শুনে জিনটি বলল ও আবার কে? আমি বললাম ও হল ঝারফুককারী ,ওঝা।সে বলল, ওকে ডাকো। আমি উঠে গিয়ে তাকে ডেকে আনলাম।
এসে দেখলাম সেই জিনটি বিরাট বড় সাপ হয়ে ঘরের (ভিতরের) ছাদে উঠে রয়েছে। ওঝা এসে যারফুক করতে সাপটি ঝটপট করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সাপটি মেঝেতে পরে গেলো। তখন তাকে ধরে ঝাপিতে ভরে নেবার জন্য ওঝা উঠল। কিন্তু আমি তাকে মানা করলাম। সে বলল,তুমি আমাকে আমার শিকার ধরতে মানা করছো। আমি তাকে একটি স্বর্ণমুদ্রা (আশরাফি) দিতে সে চলে গেলো।
তখন সেই অজগর নড়াচড়া করল এবং জিনের রুপ প্রকাশ পেল। কিন্তু সে তখন দুর্বলতার দরুন হলদে হয়ে গিয়েছিল। আমি তাকে বললাম তোমার কি হয়েছে? সে বলল ওই ওঝা আমাকে পাক ইসমের মাধ্যমে শেষ করে ফেলেছে। আমি বাচবো বলে আর বিশ্বাস হচ্ছে না। যদি তুমি এই কুয়ো থেকে চিৎকারের শব্দ শুনতে পাও,তবে এখান থেকে চলে যেও। সেই রাতেই আমি কুয়োর ভিতর থেকে এই আওয়াজ শুনলাম,"তুমি এবার চলে যাও"।
বর্ণনাকারী ইবনে আকিল (রহঃ) বলেন, তারপর থেকে ওই ঘরে লোক থাকা বন্ধ হয়ে গেলো।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন