পৃথিবীর এলিয়েন! যারা অন্ধকারে থেকেও বিখ্যাত এই টেকনোলজি জগতে সেইসব এলিয়েন হ্যাকার যারা এই জগতে স্থান করে নিয়েছে নিজেদের কর্ম দিয়ে কারা সেই বিশ্বখ্যাত এলিয়েন, কি করে তারা!

কিছু মানুষ সবার থেকে দূরে থাকে সবসময়। মনুষ্য সমাজ যাদের চিনতে পারে না। তাদের চলা ফেরা খাওয়া দাওয়া সব সময় টেকনোলজি নিয়ে। যারা ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মিনিটের মধ্যে। এই সব অতিপ্রাকৃতিক মানুষগুলো প্রযুক্তি বিশ্বে এলিয়েন নামে পরিচিত। এই অন্ধকার জগতের মানুষগুলোকে প্রযুক্তি বিশ্ব একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। অন্যের অঘটন তাদের পরিচয় বহন করে। ব্যাংক, সামরিক বাহিনী সহ গোয়েন্দা বিশ্বও তাদের নিয়ে সংকটে পড়ে মাঝে মাঝে। ঠিক এরকম কিছু অন্ধকার জগতের বিশ্বখ্যাত মানুষের সাথে আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো। যারা নিজের কর্ম দিয়ে বিশ্বব্যাপী পেয়েছেন ভালো খারাপ দুই রকমই খাতি। আসুন ধীরে ধীরে জানি তাদের চলা ফেরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যা তাদেরকে বিশ্বের মাঝে অতি প্রাকৃত মানুষের মর্যাদা দিয়েছে।
টেকনোলজি জগতে পৃথিবীর এলিয়েনঃ ১) এডরিয়ান ল্যামোঃ পরিচিত নামঃ দ্যা হোমলেস হ্যাকার দ্যা হোমলেস হ্যাকার বয়সঃ ৩৩ এডরিয়ান ল্যামো বিশ্বের মাঝে পরিচিত হয়ে উঠেন তার অস্বাভাবিক কিছু কাজের জন্য। তিনি দ্যা হোমলেস হ্যাকার নামে পরিচিত, কারণ তিনি সবসময় কফি শোফ এবং লাইব্রেরিতেই বসে সকল কর্মকাণ্ড সারেন। তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস, গুগল, ইয়াহু!, মাইক্রোসফট সহ বিশ্বের নামকরা সকল সাইট হ্যাঁক করে এই জগতে সাড়া ফেলে দেন। ২০০৩ সালে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০০২ সালে টাইমস পত্রিকার সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৫ মাস পর্যবেক্ষণের পর তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। তার ফলস্বরূপ ল্যামো ক্যালিফোর্নিয়াতে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে তিনি অজুহাত দেখিয়ে ৬ মাস গৃহবন্দি থাকার সুযোগ পান। এর পরেও এডরিয়ানের জীবন খুব সুখকর ছিল না। তিনি গার্লফ্রেন্ডের সাথে পিস্তোল রাখার জন্য এবং অপব্যবহার অভিযুক্ত হন। পরে তিনি মানসিক বিকার গ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হন। সরকারি হাজার হাজার নথি চুরির অপরাধ বয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে। ২) জেন্সন জেমস আনচেটাঃ পরিচিত নামঃ প্রাণবন্ত হ্যাকার বয়সঃ ৩০ প্রাণবন্ত হ্যাকার ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসি এই হ্যাকার পরিচিতি পান সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে, সেই সাথে স্প্যাম ছড়ানোর জন্য। তিনি ৫ লাখ সামরিক কম্পিউটার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেন। সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইটে তার নিজস্ব অ্যাড বসান। ২০০৫ সালে তিনি একটা ক্লায়েন্ট পান এবং বেশ সাচ্চন্দে চলছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বন্দি হন এবং ১৬ মাসের কারাবরণ করেন। ৩) অ্যাস্ট্রাঃ বয়সঃ ৫৮ অ্যাস্ট্রা অ্যাস্ট্রা নামের এই হ্যাকার কখনও পাবলিকলি সনাক্ত করা যায় নি। যদিও তিনি ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার হন, তখন জানা যায় তিনি একজন ৫৮ বছর বয়েসি। তিনি বিমান কোম্পানী, Dassault গ্রুপের ওয়েব হ্যাঁক করে গ্রেপ্তার হন। এতে কোম্পানিগুলো বহুত টাকা লসের সম্মুখীন হন। তিনি সে সময় সামরিক বিমানে অস্ত্র প্রযুক্তি তথ্য চুরি করেন এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মধ্যপ্রাচ্য, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকা চুরি করেন। ৪) ওয়েন থর ওয়াকারঃ পরিচিতি নামঃ এ কিল বয়সঃ ২৫ ওয়েন থর ওয়াকার ২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়সে এই হ্যাকার ওয়েন থর ওয়াকার এর বিরুদ্ধে ৬ টি সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ আনা হয়। তিনি একটি আন্তর্জাতিক হ্যাকার নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে দেন এবং সেই গ্রুপ ১.৩ মিলিয়ন কম্পিউটারের তথ্য অধিকরণ করে। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ২০ মিলিয়ন ডলার অধিকরণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে এই কিশোর প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন এবং ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাকিং শুরু করেন। এই কিশোর ব্যাংক সহ অন্য কোম্পানি হ্যাকিং করতেন আর গ্রুপের অন্য সদস্যরা টাকা চুরি করতেন। ওয়েন থর ওয়াকার এখন অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন। ৫) কেভিন পলসেনঃ ডাকনামঃ ডার্ক দান্তে বয়সঃ ৪৯ কেভিন পলসেন কেভিন পলসেন প্রথম আমেরিকান যিনি কারাগার থেকে মুক্তি হওয়ার পর ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। L.A. radio station KIIS FM নামে রেডিও স্টেশন হ্যাঁক করে তিনি পরিচিতি পান। বিভিন্ন অনলাইন রহস্য উতঘাটনের এক্সপার্ট বলে তিনি পরিচিতি পান। তিনি বন্দি জীবনেও ৫ বছর বিভিন্ন অনলাইন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, পরবর্তীতে তাকে ৩ বছরের জন্য কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষিদ্ধ করা হয়। ADs by Techtunes ADs তিনি এখন একজন লেখক এবং মাই-স্পেসে যৌন অপরাধ নিয়ে একটা নিবন্ধ লেখেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে একজন গ্রেপ্তারও হন। ৬) আলবার্ট গঞ্জালেজঃ ডাকনামঃ কিং চিলি আলবার্ট গঞ্জালেজ আলবার্ট গঞ্জালেজ ৪০০০ সদস্য নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করেন, যারা ব্যাংক একাউন্ট হ্যাঁক, বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাঁক করা কাজে জড়িত ছিলেন। এই গ্রুপ যে ড্রাইভার 'লাইসেন্স, সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, জন্ম সার্টিফিকেট, কলেজ ছাত্র পরিচয় পত্র, এবং স্বাস্থ্য বীমা কার্ড ইত্যাদি হ্যাঁক করতো তা বিভিন্ন মানুষের কাছে বিক্রি করতেন। আলবার্ট গঞ্জালেজের এই ক্ষমতাশীল গ্রুপ ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড হ্যাঁক করে আলোচনায় চলে আসেন। তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ব্যাংক কার্ডের তথ্য চুরি করেন। তিনি মে ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার হন এবং ২০২৫ সাল পর্যন্ত বন্দি অবস্থায় থাকবেন। ৭) কেভিন পিটনিকঃ ডাকনামঃ দ্যা ডার্কসাইড হ্যাকার বয়সঃ ৫১ দ্যা ডার্কসাইড হ্যাকার কেভিন পিটনিক তার কাজকে সবসময় সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ হিসেবে অবিহিতি করতেন, কখনও হ্যাকিং বলতে পছন্দ করতেন না। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে হ্যাকিং শুরু করেন এবং এই বয়েসেই তিনি হ্যাঁক করতেন লস এঞ্জেলসের বাসের টিকিট। পরবর্তীতে তিনি নকিয়া, মটোরলা, আইবিএম এর মতো নামকরা ওয়েবসাইট হ্যাঁক করে আলোচনায় আসেন। ১৯৯৫ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১২ মাস পরে তাকে মুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি হ্যাকিং বন্দ করলেন না। ক্লোন ফোন তৈরিতে তার কাজ ছিল। পরবর্তীতে তাকে ৩ বছরের জন্য আবার কারাবাস দেওয়া হয়। ঐসময় তাকে দেশের সবথেকে বড় সাইবার ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত হন। বর্তমানে তিনি অনলাইন সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন। ৮) জনাথন জেমসঃ ডাকনামঃ কমরেড বয়সঃ ২৪ (মৃত্যুর সময়) ADs by Techtunes ADs জনাথন জেমস অ্যামেরিকার প্রথম কারাবাস করা হ্যাকার ছিলেন এই কিশোর। ১৫ বছর বয়সে তিনি হ্যাকিং জগতে পরিচিত হয়ে উঠেন। নাসা, সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইট সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট তিনি হ্যাঁক করেছিলেন। তিনি ১.৭ মিলয়ন ডলার ইনকাম করেন এই হ্যাকিং থেকে। নাসার স্পেস টেক হ্যাঁক করলে তিনি নজরে পড়ে যান। তখন ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে গৃহবন্দি করা হয়। পরে ২০০৭ সালে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করেন। তাকে চোর অভিযুক্ত করা হয়। তিনি ২০০৮ এর মেতে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি এই নোট দেন। “বিচার ব্যবস্থার প্রতি তার কোন আস্থা নেই” ৯) ভ্লাডিমির লেভিনঃ ভ্লাডিমির লেভিন লেভিনের বাস্তব জীবন সম্পর্কে খুব কম জানা যায়। লেভিন ব্যাংক একাউন্ট হ্যাঁকে খুব বেশি এক্সপার্ট ছিলেন। এই করে তিনি অনেক টাকা নিজের একাউন্টে করে নেন। সিটি ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাঁক করে তিনি নিজের করে নেন ১০.৭ মিলিয়ন ডলার। তবে লেভিন একটা আশ্চর্য পদ্ধতি অবলম্বন করে হ্যাকিং করতেন। তিনি মোবাইলের কথা আড়ি পেতে এই ব্যাংক একাউন্ট নিজের করতেন। তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে ৩ বছরের জেলে সাব্যস্ত হন। ১০) গ্যারি ম্যাককিননঃ ডাকনামঃ একাকী মানুষ বয়সঃ ৪৬ একাকী মানুষ গ্যারি ম্যাককিনন ফেব্রুয়ারি ২০০১ থেকে মার্চ ২০০২ পর্যন্ত প্রায় ১০০ অ্যামেরিকান সামরিক এবং নাসার সার্ভার হ্যাঁক করেন। আর এরকম অতিআশ্চর্য কাজগুলো তিনি লন্ডনে তার গার্লফ্রেন্ডের অ্যান্টির বাসায় বসে করতেন। তিনি অনেক প্রয়োজনীয় ফাইল, সফটওয়্যার এবং ডাটা ডিলেট করে দেন, যা পরবর্তীতে সরকারকে ৭ লাখ ডলার ব্যয় করেন রিকভার করতে। তিনি নাসার ওয়েবসাইট স্পেস টেকের খুব ভালো ভালো কিছু ছবি নিজের কাজে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বাস্তব জীবনে একজন মজার মানুষ। পরবর্তীতে অনেক বইতে তিনি এরকম মজার অনেক তথ্য জানান। এই একাকী মানুষ এখন ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। ১১) মাইকেল চেলচিঃ ডাকনামঃ মাফিয়া বয় বয়সঃ ৩০ মাফিয়া বয় নতুন সহস্রাব্দের মধ্যে মাইকেল চেলচি অ্যামাজান, ই-বে, সিএনএন, ইয়াহু, ডেল সহ অনেক নামকরা ওয়েব হ্যাঁক করেন। তখন ইয়াহু ছিল বিশ্বের নামকরা সার্চ ইঞ্জিন। অবস্থা খারাপ দেখে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন মাফিয়া বয়কে খোঁজার জন্য ফোর্স ঠিক রাখেন। তিনি বলেন তিনি শুধু ছোট একটা রুমে বসে এতো কিছু করেন। পরে তাকে ৮ মাস ইন্টারনেটের সাথে থাকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, সাথে কিছু জরিমানাও। এই নেট আসক্ত ছোট ছেলে হাইস্কুল লেভেল থেকেই এতোসব অঘটন ঘটান। ১২) ম্যাথু বেভান এবং রিচার্ড প্রাইসঃ ডাকনামঃ ডাটাস্ট্রিম কাউবয় (প্রাইস) ADs by Techtunes ADs বয়সঃ ৪১ (বেভান) ৩৫ (প্রাইস) ডাটাস্ট্রিম কাউবয় এই ব্রিটিশ হ্যাকার পেন্টাগনের নেটওয়ার্ক আক্রমণ করেন এবং তা ২ সপ্তাহের বেশি সময় নিজেদের আয়ত্তে রাখেন। তারা উত্তর কোরিয়ার মার্কিন সেনার তথ্য অধিকরণ করেন। যদিও পরে তা সরকার রিকভার করেন। প্রাইস যখন ১৬ এবং বেভান ২১ তখন তারা কোরিয়ান পারবানিক সুবিধা এক্সেস করেন। দুই কোরিয়ার যুদ্ধের সময় তারা এই কর্মকাণ্ড করেন। যদিও পরের বছর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩) সিরিয়ান ইলেকট্রনিক আর্মিঃ সিরিয়ান ইলেকট্রনিক আর্মি সিরিয়ান ইলেকট্রনিক আর্মি একটি ইউনিক গ্রুপ। ২০১১ সালে তারা পরিচিতি লাভ করে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অধিনে তারা খুব বেশি উঠে আসতে পারেন নি। তবে তারা অনেক উচ্চ ধরনের ওয়েবসাইট হ্যাঁক করছেন। স্প্যাম, ম্যালওয়ার, ফিশিং সহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ড তারা করেন। যদিও তারা তা অস্বীকার করেন। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে তারা ডজন খানিক কর্মকাণ্ড চালু করেন। এমনকি তারা টুইটারেও আছেন। ১৪) লিজারড স্কোয়াডঃ লিজারড স্কোয়াড আপনি যদি একজন গেমার হন তাহলে অবশ্যই এই লেজারড স্কোয়াডের নাম শুনছেন। কারণ এরাই গত বছর ক্রিস্টমাস দিনে PlayStation এবং Xbox নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। তারা এরকম বহুত গেম হ্যাঁকের সাথে জড়িত। তারা টিন্ডার, ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের তথ্য চুরি করেন এবং টেলর সুইফটের প র্ণ ছবি প্রকাশ করবেন বলে ফুটারে লিখে রাখেন। যদিও পরবর্তীতে ভিন্নে ওমারি নামে ২২ বছর বয়সি এবং রায়ান নামে ১৭ বছর বয়সি ব্রিটেনের দুইজনকে আটক করেন। ১৫) অ্যানোনিমাসঃ অ্যানোনিমাস একটি বৈশ্বয়ীক হেকটিভিস্ট দল। এই হেকটিভিস্ট দলটি সাধারনত কোন ওয়েবসাইটে ডিনাইয়াল অভ সার্ভিস (ডিডস) এর মাধ্যমে হামলা করে থাকে। ২০০৩ সালে এই দলটি সাড়া বিশ্বের কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দ্বারা গঠিত হয়। অ্যানোনিমাসের সদস্যরা “অ্যানোন” নামে পরিচিত। তার সাধারনত কোন প্রতিবাদ মিছিলে আসলে এক ধরনের মাস্ক ব্যবহার করে। অ্যানোনিমাস অ্যানোনিমাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অনেক দেশে সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন দেশের সরকারি ওয়েবসাইটেও হামলা করে থাকে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, তিউনিসিয়া, উগান্ডা এবং আরো অনেক। এছাড়া শিশু পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট, কপিরাইট প্রোটেকসন এজেন্সি, দ্য ওয়েস্ট বোরো বেপটিস্ট গির্জা ও বহুজাতিক কম্পানি যেমন, পেপ্যাল, মাস্টার কার্ড, ভিসা এবং সনি তাদের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। অ্যানোনিমাস বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসকেও সমর্থন করে। কারন ২০১০ সালে উইকিলিকস হাজার হাজার কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে দেয়ার পর পেপ্যাল, মাস্টার কার্ড এবং ভিসা উইকিলিকসের সঙ্গে তাদের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরই প্রতিবাদে পেপ্যালে কয়েকদফা মারাত্মক সাইবার হামলা করেছিল অ্যানোনিমাস। অ্যানোনিমাসের সমর্থকরা এই হেকটিভিস্ট দলকে “মুক্তিযুদ্ধা” ও “ডিজিটাল রবিনহুড” নামে আক্ষায়িত করে থাকে। কিন্তু সমালোচকরা এদেরকে “সাইবার মাফিয়া” ও “সাইবার সন্ত্রাসী” হিসেবে আক্ষায়িত করে থাকে। অ্যানোনিমাস ২০১২ সালে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকীর বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পেয়েছিল।

ইসলামে নিষিদ্ধ জাদু করা

জাদু একটি কুফরি ও ধ্বংসের কাজ। বড় গোনাহের মধ্যে জাদু অন্যতম। জাদুর কারণে মানুষের নেক আমলগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। জাদুকরদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই বলে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এটি কবিরা গোনাহ। শয়তানের মূল মিশন হলো মানুষকে সত্য ও ন্যয়ের পথ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া। শয়তান এ মিশন বাস্তবায়নে জাদুকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করছে। সে কারণেই কুরআন-সুন্নায় জাদুকে কুফরি ও ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাদু করা শয়তানের কাজ। মানুষের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কিংবা আমিত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে যদি কেউ জাদু বিদ্যা প্রয়োগ করে তাও কুফরি এবং তা বড় গোনাহের কাজ। এর ভয়াবহতাও মারাত্মক। কুরআন এবং হাদিসে তা থেকে বিরত থাকতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। জাদু কুফরি কাজের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে জাদুকর এবং জাদু করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেন- তারা ঐ শাস্ত্র বা বিদ্যার অনুসরণ করলো, যা (হজরত) সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেননি; শয়তানরাই কুফর করেছিল।
তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা (হারুত-মারুত) উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তাদ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।(সুরা বাকারা : আয়াত ১০২) বর্ণিত আয়াতে জাদুকে কুফরি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কুফরি করা হলো কবিরা গোনাহ। আর জাদু কবিরা গোনাহ হওয়ার কারণেই যারা এ গোনাহে জড়িত হবে, তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশ বা প্রতিদান নেই । হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাদু থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। জাদুকে ধ্বংসকারী কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাক। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি? তিনি বললেন- ১. আল্লাহর সাথে শরিক করা; ২. জাদু করা; ৩. উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা; ৪. আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন তথা- সুদ খাওয়া; ৫. ইয়াতিমের মাল খাওয়া; ৬.জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা; ৭. সতী-সাধ্বী সরলমনা নারীদের প্রতি অপবাদ দেয়া। (বুখারি) এ হাদিসের আলোকেও জাদু ধ্বংসকারী কাজের মধ্যে একটি। এ কাজ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। সুতরাং মানুষের আমল ধ্বংসকারী কুফরি কাজ জাদু থেকে বিরত থাকা ঈমানের একান্ত দাবি। কেননা, যে কোনো জাদুই ইসলামের সাথে কুফরি ও কবিরা গোনাহের শামিল। মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে জাদু থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। অন্তরে এ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও জাদু বাধা। সেজন্য এটিকে হারাম ঘোষণা করলেন মহান আল্লাহ।